পাঁচবিবিতে হাঁস পালনে স্বাবলম্বী মিনারা বেগম

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
অভাবী স্বামীর সংসারের আর্থিক অস্বচ্ছলতা দুর করে নিজের স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনরাত কঠোর পরিশ্রম করে সাফল্যের মুখ দেখতে শুরু করেছেন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামের এক নারী গৃহিনী মিনারা বেগম। তিনি এখন সফল উদ্যোক্তা । স্বামী-সংসারের আয় বাড়িয়ে নিজ পায়ে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে হাঁস পালন শুরু করে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠেছেন তিনি। তার এই প্রচেষ্টা দেখে বাড়তি আয়ের আশায় এলাকার অনেকেই হাঁস পালনের কথা ভাবছেন।
মিনারা বেগমের বাড়ি উপজেলার আওলাই ইউনিয়নের নওগাঁ কাঁঠালী গ্রামে। তার স্বামী ফজলুর রহমান ।
প্রন্তিক চাষি ফজলু দম্পতির জমিজমা বেশি না। একারণে দুই মেয়ে আর এক ছেলেকে নিয়ে অতি কষ্টে দিন যাপন করছিলেন। সামান্য জমি চাষাবাদ আর কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ইতিমধ্যে বড় মেয়ে ও ছেলেকে বিয়ে দিয়েছেন। আর ছোট্ট মেয়ে কওমী মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। ছেলে মেয়ের বিয়ে ও ছোট্ট মেয়ের পড়াশুনার খরচ যোগান দানে অনেকটাই ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েন তারা। পাশাপাশি তাদের সংসারে খরচ বৃদ্ধি পাওয়াই অথনৈতিক ভাবে চরম সংকটে পড়তে হয়। স্বামীর আয়ে সংসার চালানো দায় হয়ে পড়লে আয় বাড়াতে বিকল্প চিন্তা করেন মিনারা। সেই ভাবনা থেকে গত ৫ বছর পূর্বে পার্শ্ববর্তী ঘোড়াঘাট উপজেলার বলাহার গ্রামের তার ভাইয়ের হাঁসের খামার দেখে হাঁস পালনের সিদ্ধান্ত নেন মিনারা বেগম । পরে মাত্র ১৫ হাজার টাকা দিয়ে অষ্ট্রেলিয়ান জাতের ৫শ হাঁসের বাচ্চা ক্রয় করে খামার শুরু করেন। এরপর আর তাকে পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাত্র তিন মাসের লালন পালনে প্রথম চালানে ১ লক্ষ ১১ হাজার টাকার হাঁস বিক্রি করেন । এতে খরচ বাদে মিনারা বেগমের লাভ হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা। বর্তমানে তার খামারে রয়েছে ১ হাজার ৬ শ টি অষ্ট্রেলিয়ান জাতের হাঁস । এবার তিনি হাঁস বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভ করার আশা করছেন । এখন হাঁসের খামারে তার ভাগ্যের চাকা খুলে গেছে । সংসারে ঘাটতি ও তাদের ঋন পরিশোধ করেছেন এবং তাদের ছোট্ট মেয়ে দাওরায়ে হাদিস পড়াশুনা শেষ করেছেন।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির পাশে নেট আর বেড়া দিয়ে ঘেরা খামারটিতে হাঁসের খাবার দিচ্ছেন মধ্যবয়সী মিনারা বেগম।
তিনি জানান, প্রতিবছর এই মৌসুমটাতে হাঁস পালন করেন তিনি। সিরাজগঞ্জের একটি হ্যারারী থেকে প্রতি পিচ হাঁসের বাচ্চা ৩৬ টাকা দরে ক্রয় করেন। ব্যাংক বা বিকাশের মাধ্যমে টাকা পেমেন্ট করলেই বাড়ীতে বাচ্চা পৌছে দেন হ্যাচারীর মালিকরা। সেই বাচ্চা ৩ থেকে ৪ মাস পালন করলেই বিক্রির উপযুক্ত হয়। প্রতি হাঁস ১৯০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিভিন্ন হ্যাচারীর মালিকরাই সেই হাঁস ক্রয় করে নিয়ে যান।
হাঁস পালনে খরচ সাশ্রয়ে মিনারা অভিনব পথ বেছে নিয়েছেন । তিনি বলেন, খামারে ক্রয় করা খাবার খাওয়ালে অনেক খরচ বেশি হতো। কিন্তুু বাড়ীর পাশে ইরি বোরো ধান কাটার পর আমন ধান রোপন করার আগ পর্যন্ত ফাঁকা মাঠে হাঁস গুলোকে ছেড়ে দিয়ে প্রাকৃতিক খাবার খাওয়াই এজন্য খরচ কম হয়।
তবে হাঁস পালনে ঝুঁকির কথাও জানান তিনি। জ্বর সর্দি ও হাপানী রোগের কারণে হাঁসের সমস্যার সৃষ্টি হয়। এতে হাঁস মারা যায়। সে ক্ষেত্রে ঔষধের খরচ বেশি হয়। বাড়ি দূরে হওয়াই প্রাণি সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়না। তার খামারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, আগামীতে নিজ বাড়িতে বড় খামারের পাশাপাশি একটি হ্যাচারীর করার চিন্তা রয়েছে।
অপরদিকে মিনারা বেগমের হাঁসের খামারের সাফল্য দেখে অনেকের মত ঐ গ্রামের নজরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি ৫শ হাঁসের বাচ্চা দিয়ে পালন শুরু করেছেন। আগামীতে তিনিও খামারের পরিসর বাড়ানোর চিন্তা রয়েছে বলে জানান।
এবিষয়ে প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. হাসান আলী বলেন- উপজেলায় এখন অনেক হাঁসের খামারি আছেন। তারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর এর সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে আমাদের পরামর্শে হাঁস লালন পালন করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তাদের মধ্যে একজন হলেন মিনারা খাতুন। আমরা সকলকে দ্রুততার সহিত সেবা প্রদান করে থাকি। টিকা, চিকিৎসা, বিভিন্ন ধরনের সরকারি সুযোগ সুবিধা আমরা খামারিগনকে দিয়ে থাকি। এই খামারিগনই আমাদের অর্থনীতির মুল চালিকা এবং ভবিষ্যতে আরো বড় অবদান রাখবে তারা।