ভর্তির পরও সংকটে রাবি শিক্ষার্থী বীরগঞ্জের তুষার

বীরগঞ্জ (দিনাজপুর) প্রতিনিধি
চলতি ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশের পাঁচটি স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলেন দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার পাল্টাপুর ইউনিয়নের ধুলোট গ্রামের তুষার চন্দ্র রায়। দরিদ্র পরিবারের এ তরুণ কোনোমতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির অর্থ জোগাড় করতে পারলেও পড়াশোনা চালিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
মেধাবী শিক্ষার্থীর বাড়িতে থাকার জায়গা বলতে শুধু আছে বাঁশের বেড়ার একটি ছোট্ট ঘর। সেই কুঁড়েঘর থেকেই তুষার স্বপ্ন দেখেছে আইনজীবী হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু তার উচ্চশিক্ষার পথের শুরুটা যতটা গর্বের, বাকি পথটা ঠিক ততটাই কণ্টকাকীর্ণ। ভর্তির খরচ কোনমতে জোগাড় হলেও সামনের দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের খরচ বহন করা তার পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।
ভিক্টোরি প্লাস কোচিং এর পরিচালক সোহেল রানা বলেন, তুষার একজন অদম্য মেধাবী, সে আমাদের বীরগঞ্জের গর্ব, দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে আমি বীরগঞ্জ উপজেলার মেধাবীদের নিয়ে কাজ করছি। এমন প্রতিভাবানরা একটু সুযোগ পেলেই বিশ্ব জয় করতে পারে। সমাজের বিত্তবানদের প্রতি অনুরোধ, আসুন তুষারের পাশে দাঁড়াই। তুষার থেমে গেলে সেটি হবে আমাদের সবার ব্যর্থতা। একজন অদম্য মেধাবী তরুণের স্বপ্ন যেন শুধুমাত্র অভাবের কারণে থেমে না যায়-এটাই আজকের দাবি। দেশপ্রেমিক, শিক্ষানুরাগী, মানবিক এবং সামর্থ্যবান সকলের প্রতি আহ্বান-এই অমিত সম্ভাবনার নাম তুষার চন্দ্র রায়-এর পাশে দাঁড়ান। তুষারের বাবা উপেন্দ্রনাথ রায় যখন মারা যান, তখন সে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। তারপর থেকে পরিবারের হাল ধরেছেন মা। দুই সন্তানকে নিয়ে দিনমজুরের কাজ করেই লড়ছেন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। অভাবের সংসারে হাল ধরার জন্য একসময় সেই কিশোর তুষারকেও নেমে পড়তে হয়েছে মাঠে-দিনমজুরিতে। কিন্তু তার চোখে ছিল একটি স্বপ্ন—উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করা।
জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ৪৩ তম, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ তম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩২৫ তম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৪০ তম এবং গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ১১৫৪ তম স্থান অর্জন করেন তুষার। পরে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে ভর্তি হন। তুষার চন্দ্র রায় বলেন, ভর্তির খরচ কোনোমতে জোগাড় হলেও সামনের তুষার চন্দ্র রায়
দীর্ঘ শিক্ষাজীবনের খরচ বহন করা তাঁর পরিবারের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর আহমেদ বলেন, ‘তুষারের মতো মেধাবী শিক্ষার্থীরা আমাদের জাতির ভবিষ্যৎ। প্রতিকূল পরিবেশেও সে যেভাবে সংগ্রাম করে দেশের শীর্ষ বিশ্ব বিদ্যালয়গুলোতে পেয়েছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তুষারের বিষয়ে ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি এবং খোঁজ নিচ্ছি কীভাবে তাকে সহযোগিতা করা যায়।’